🚗 Hybrid এবং Non-Hybrid এর মাঝে পার্থক্য

বর্তমান যুগে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে এক বিপ্লব ঘটেছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন শুধু পেট্রোল বা ডিজেল নয়, বরং বিদ্যুতের শক্তিও ব্যবহার হচ্ছে গাড়ি চালানোর জন্য। এর ফলেই এসেছে হাইব্রিড গাড়ি — এমন এক সিস্টেম যেখানে ইঞ্জিন ও ইলেকট্রিক মোটর একসাথে কাজ করে।

কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে — “হাইব্রিড আর নন-হাইব্রিড (সাধারণ) গাড়ির মধ্যে পার্থক্য আসলে কী?” চলুন সহজভাবে জেনে নিই👇

হাইব্রিড গাড়ি কী?

হাইব্রিড গাড়ি হলো এমন একটি গাড়ি যা দুই ধরনের শক্তি ব্যবহার করে —
একদিকে থাকে ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিন (ICE), আর অন্যদিকে থাকে ইলেকট্রিক মোটর ও ব্যাটারি সিস্টেম। এই দুই শক্তির সমন্বয়ে গাড়িটি চলে — ফলে জ্বালানি কম খরচ হয়, দূষণও কম হয়।

একটি হাইব্রিড গাড়ি সাধারণত তিনভাবে চলে —

শুধু ইলেকট্রিক মোটরে (EV মোডে),
শুধু ইঞ্জিনে,
অথবা দুটো একসাথে।

নন-হাইব্রিড গাড়ি কী?

নন-হাইব্রিড গাড়ি বা সাধারণ গাড়ি হলো সেই গাড়ি যা শুধুমাত্র ইঞ্জিনের শক্তি (পেট্রোল বা ডিজেল) দিয়ে চলে। এখানে কোনো ইলেকট্রিক মোটর বা হাই-ভোল্টেজ ব্যাটারি থাকে না।

এই ধরনের গাড়ি শত শত বছর ধরে প্রচলিত এবং এখনো বাজারে অধিকহারে ব্যবহৃত।

শক্তির উৎস ও কাজের পার্থক্য

হাইব্রিড গাড়িতে শক্তি আসে ইঞ্জিন + ব্যাটারি + মোটর থেকে। যখন গাড়ি ইঞ্জিনে চলে তখন গাড়িকে চালানোর পাশাপাশি High Voltage Battery অর্থাৎ Hybrid Battery কেও চার্জ করে। আবার গাড়ি চলার সময় ব্রেক করলে বা গতি কমালে সেই শক্তি আবার ব্যাটারিতে জমা হয় — একে বলে Regenerative Braking System। যখন গাড়ি ব্যাটারি এবং মোটর দ্বারা চলে তখন ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় থাকে। এ অবস্থায় তুলনামূলক প্রায় নিঃশব্দ ভাবে চলে এবং Dashboard এ EV লেখা আশে। আবার যখন ব্যাটারি চার্জ দরকার হয় অথবা একটু বেশি Acceleration করে চালানো হয় তখন গাড়ি আবার ইঞ্জিনে চলে। তখন Dashboard এ EV লেখা থাকে না। আবার যখন গাড়িতে বেশি পাওয়ার দরকার হয় তখন ব্যাটারি এবং ইঞ্জিন উভয় একসাথে কাজ করে।

অন্যদিকে, নন-হাইব্রিড গাড়িতে শুধু একটি শক্তির উৎস থাকে তা হচ্ছে Internal Combustion Engine। যা জ্বালানিকে পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে গাড়িকে পরিচালনা করে। এখানে কোনো High Voltage Battery থাকে না এবং কোনো Regenerative Braking System কাজ করে না।

জ্বালানি সাশ্রয় ও পারফরম্যান্স

হাইব্রিড গাড়ি সাধারণ নন-হাইব্রিড গাড়ির তুলনায় ৩০–৫০% পর্যন্ত কম জ্বালানি খরচ করে, কারণ ইলেকট্রিক মোটর এবং High Voltage Battery গাড়িকে পরিচালনা করে তখন ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থায় থাকে অর্থাৎ তখন কোনো জ্বালানি খরচ হয় না এবং যা গাড়ির জ্বালানি খরচ কমাতে সহায়তা করে।

অন্যদিকে, নন-হাইব্রিড গাড়ি চলার জন্য ইঞ্জিন সবসময় চালু থাকতে হয় যার ফলে হাইব্রিড গাড়ির তুলনায় জ্বালানি খরচ বেশি হয়।

পরিবেশগত প্রভাব

হাইব্রিড গাড়ি পরিবেশবান্ধব, কারণ এতে ইঞ্জিন হতে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস ( কার্বন মনোক্সাইড CO, হাইড্রোকার্বন HC, নাইট্রোজেন অক্সাইড NO₂, কার্বন ডাই-অক্সাইড CO₂ ) নির্গমন কম হয়।

এছাড়া EV মোডে চলার সময় গাড়ি একদম নিঃশব্দ থাকে।

অন্যদিকে, নন-হাইব্রিড গাড়িতে ইঞ্জিন হতে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন বেশি হয় , শুধু ইঞ্জিন দ্বারা চলার কারনে শব্দও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।

খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণ

বর্তমানে হাইব্রিড গাড়ির দাম সাধারণ গাড়ির চেয়ে বেশি, কারণ এতে অতিরিক্ত ব্যাটারি, কন্ট্রোল সিস্টেম এবং মোটর থাকে যা আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত। নন-হাইব্রিড গাড়ির দাম কম।

হাইব্রিড গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি। কারন প্রতি ৬ মাস বা ১ বছর পরপর গাড়ির হাইব্রিড সিস্টেমসহ সকল সিস্টেম Computerized Diagnosis এবং হাইব্রিড সিস্টেমসহ ফুয়েল সিস্টেম সার্ভিস করতে হয় যেমন Hybrid Battery Cooling System, Hybrid Battery Copper Sheets, Throttle Body, Injectors, Spark Plugs, EGR System Cleaning Service। যার দ্বারা গাড়ির অবস্থা বুঝা যায় এবং গাড়ির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা যায়।

অন্যদিকে, নন-হাইব্রিড গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তুলনামূলকভাবে কম। কারন আধুনিক নন-হাইব্রিড গাড়িতে Computerized Diagnosis সহ অন্য সকল সার্ভিস করতে হলেও হাইব্রিড সিস্টেমের কোনো সার্ভিস করতে হয় না। যা অনেকাংশই রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কমায়।

উভয় গাড়ির ক্ষেত্রেই General Servicing অর্থাৎ Engine Oil, Engine Oil Filter, Air Filter, A/C Filter নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করতে হয়।

সর্বশেষ বলা যায়, যদি আপনি জ্বালানি সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধবতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি চান, তবে হাইব্রিড গাড়ি আপনার জন্য ভালো বিকল্প। তবে যদি বাজেট সীমিত হয়, এবং সহজ রক্ষণাবেক্ষণ চান, তাহলে নন-হাইব্রিড গাড়িই এখনো একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।🚘 ভবিষ্যতে পুরো অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে — তাই বলা যায়, হাইব্রিড হলো আগামী প্রজন্মের গাড়ি প্রযুক্তি